বাংলাদেশ

শতবর্ষ পেরিয়ে সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়

শতবর্ষ পেরিয়ে ঐতিহ্যের ধারক সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। ১০৯ বছর যাবত্ জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়টি। সাভারের জমিদার দানবীর রাখাল চন্দ্র সাহা ১৯১৩ সালের ১০ জানুয়ারি বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন।

তত্কালীন ব্রিটিশ শাসনামলে এ অঞ্চলের মানুষ শিক্ষার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আর এ জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো দিতেই তিনি ১০ একর জমির ওপর শুরু করেন বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ। এই স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দানবীর রাখাল চন্দ্র সাহা সাভারে শিক্ষার আলোকবর্তিকা জ্বালান। 

প্রতিষ্ঠাতা রাখাল চন্দ্র সাহা
প্রতিষ্ঠাতা রাখাল চন্দ্র সাহা

প্রতিষ্ঠানটি তার বাবা অধর চন্দ্র সাহার নামে নামকরণ করেন। নয়ন জুড়ানো বিশাল অট্টালিকার পাশে তার মায়ের নামে স্বর্ণময়ী ছাত্রাবাস ও কাকার নামে মহেশ চন্দ্র দাতব্য চিকিত্সালয় স্থাপন করেন। জমিদার রাখাল চন্দ্র সাহা তার জীবদ্দশায় বিদ্যায়লয়টির পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে না পারলেও তার স্ত্রী প্রিয়বালা সাহা তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করেন।

রাখাল চন্দ্র সাহার মৃত্যুর পর তার স্মৃতি অম্লান করে রাখতে ‘রাখাল চন্দ্র স্মৃতি ভবন’ নামে একটি পাঠাগার স্থাপিত হয়েছে বিদ্যালয়ের পাশে।

রাখাল চন্দ্র স্মৃতি ভবন
রাখাল চন্দ্র স্মৃতি ভবন

১৯১৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর প্রধান শিক্ষক ছিলেন হরেন্দ্র নাথ ঘোষ বিএ। তিনি ১৯১৩ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর জ্যোতির্ময় লাহিড়ী এমএ বিটি, কুমুদিনী কান্ত গাঙ্গুলী এমএ (ডাবল), প্রাণকুমার গোস্বামী এমএ, গুরু প্রসাদ গাঙ্গুলী বিএ বিটি, চুনিলাল সাহা এমএ বিটি, ভূপতিনাথ সরকার এমএ, জালাল উদ্দিন আহমেদ এমএ, মজিদুল হক বিএ বিটি, আবদুর রাজ্জাক এমএ বিটি, এম ফজলুল হক বিএ (অনার্স) এমএ বিএড পর্যায়ক্রমে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।


ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইলে পড়ুন –


স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পলন করেন মরহুম আব্দুস সাত্তার মিয়া বিএ বিএড, পরে জগদীশ চন্দ্র রায় (ভারপ্রাপ্ত) বিএ বিএড, আবুল বাশার (ভারপ্রাপ্ত) বিকম বিপিএড, মো. আব্দুস সামাদ বিএসএস (অনার্স) এমএসএস, মো. হারুন অর রশীদ (ভারপ্রাপ্ত) বিকম বিএড।

এ প্রতিষ্ঠানের অনেক ছাত্র রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তত্কালে বিদ্যালয়টি এতটাই প্রসিদ্ধ ছিল যে সাভারের বাইরে থেকেও অনেক শিক্ষার্থী এ বিদ্যালয়ে পড়তে আসতো। আগে এ অঞ্চলের রাস্তা ভালো ছিল না। যাতায়াতের জন্য গাড়ি কিংবা রিক্সাও ছিল না। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে এমনকি ১৫/২০ মাইল দূর থেকেও পায়ে হেঁটে ছাত্ররা এ বিদ্যালয়ে পড়তে আসতো। 

তাই ছাত্রদের থাকা ও খাওয়ার জন্য একটি ছাত্রাবাস থাকলেও বেশ কয়েক বছর ধরেই স্কুল কতৃপক্ষ ছাত্রাবাস বন্ধ করে দিয়ে ঐ স্থানে দোকান বসিয়ে স্কুলের জমিতে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ছাত্রাবাসের সাথে একটি পুকুর থাকলেও তা একই সময়ে ভরাট করে সেখানেও দোকান ভাড়া দিয়ে দিয়েছে স্কুল কতৃপক্ষ যা দেখার কেউ নেই।  

বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে দুই শিফটে পাঠদান হয়, শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে সুবিশাল খেলার মাঠ ও সুবিন্যস্ত ফুলের বাগান। এখনো এ এলাকায় শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ ভূমিকা পালন করে চলছে।

সম্পূর্ন স্কুল ভবন
সম্পূর্ন স্কুল ভবন

শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে যে দানবীররা প্রতিষ্ঠানটি করে গেছেন তারা প্রয়াত হলেও যুগ যুগ ধরে তারা অমর এবং চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন সাভারবাসীর হৃদয়ে। এক কথায় বলা যায় সাভারের দানবীর রাখালচন্দ্র সাহা শিক্ষা খেত্রে সাভারে প্রথম শিক্ষার দ্বীপ জ্বেলেছিলেন।


০৬/০৪/২০২২, ০৯.৪০ PM 

তথ্যসূত্রঃ

১। https://bn.wikipedia.org/

Shamim Rony

পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। খুব কাঠখোট্টা বিষয় নিয়ে বসবাস। চেষ্টা করি সমস্যার গভীরে যেয়ে ডুবুরীর মুক্তা আরোহনের মতোই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে আনতে। জানার আগ্রহ প্রবল। এখনো নিজেকে এই বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের ছাত্র বলেই মনে করি। টেকনোলজি ভালোবাসি, সেই সাথে ভ্রমন পিপাসুও বটে। টেক দুনিয়ার হাল-চাল, বিদেশী অনুবাদ ও বিদেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতার রসদ সম্বল করেই কলম ধরেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *