সাভার কেন বিখ্যাত
সাভার-২৮০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশের এক বিশাল উপজেলা। সাভার সর্বদিক দিয়েই সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। সাভারের বিখ্যাত অনেক কিছুই রয়েছে। আসুন এক দৃষ্টিতে দেখে নেয়া যাক সাভারের কি কি রয়েছে।
১। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্বত্যাগকারী শহীদদের সম্মানার্থে এবং তাদের স্বরণে তৈরি করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। যা সাভারে অবস্থিত।
২। বাংলাদেশের একমাত্র শতভাগ আবাসিক সুবিধা সম্বলিত বিশ্ববিদ্যালয় হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দিক থেকেও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ভেতরের লাল মাটি সম্বলিত উচু নিচু রাস্তা, লেক, পুকুরে পদ্মার জলকেলি, প্রজাপতির মেলা, নানান রকমের গাছের সমারোহ, বাগানের সৌন্দর্য সহ সবকিছু একসাথে একমাত্র এই জাবিতেই রয়েছে। শীতকালে সুদুর সাইবেরিয়া হতে অতিথি পাখির আগমন ঘটে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা সাভারে অবস্থিত।
৩। আপনি যত বড় বিসিএস ক্যাডার হন না কেন ট্রেনিং এর জন্য কিন্তু আপনাকে সাভারেই আসতে হবে। কারন বিসিএস ক্যাডারদের ট্রেনিং এর একমাত্র প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষন কেন্দ্র (বিপিএটিসি)। যা সাভারে অবস্থিত।
৪। দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার Centre For The Rehabilitation Of The Paralyzed (CRP) কিন্তু সাভারেই অবস্থিত। এর প্রতিষ্ঠাতা ইংল্যান্ডের বাসিন্দা ভেলেরী টেইলর। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে এই সাভারেই স্থায়ী ভাবে রয়ে গেছেন।
৫। সাভারের আশুলিয়াতে রয়েছে Dhaka Export Processing Zone (DEPZ)।
৬। সাভারের হেমায়েতপুরে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র চামড়া প্রক্রিয়াজাত করন কেন্দ্র – সাভার ট্যানারি।
৭। এই সাভারেই রয়েছে Bangladesh Krira Shiksha Pratisthan (BKSP)।
৮। আণবিক শক্তি প্রেরন কেন্দ্রটি কিন্তু সাভারেই অবস্থিত। যেখানে বিভিন্ন পারমাণবিক বিষয় নিয়ে গবেষনা করা হয়। সারা বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র এখানেই মানবদেহের কৃত্তিম হাড় তৈরি করা হয়।
৯। শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন কেন্দ্রটি কিন্তু সাভারেই অবস্থিত। এছাড়াও সাভারে রয়েছে কেন্দ্রিয় মানব সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র।
১০। বাংলাদেশ আর্মির বিশেষ স্কোয়াড হল ডগ স্কোয়াড। আর সাভার ক্যান্টনমেন্ট এ রয়েছে কুকুরের খামার। বাংলাদেশ আর্মির ডগ স্কোয়াড এর ট্রেনিং কিন্তু সাভার ক্যান্টনমেন্টেই দেওয়া হয়।
১১। সাভারে মজিদপুরে রয়েছে রাজা হরিশচন্দ্রের রাজপ্রাসাদ।
১২। Bangladesh Livestock Research Institute (BLRI) সাভারে অবস্থিত।
১৩। দক্ষিণারঞ্জণ মিত্র যিনি ঠাকুরমার ঝুলির লেখক তার পৈএিক নিবাস সাভারের উলাইল (কর্ণপাড়া)।
১৪। সাভারের বলিয়াপুরের চাকুলিয়াতে বাণিজ্যিক ভাবে বিদেশী ড্রাগন ফলের চাষ হয়।
১৫। এই সাভারেই কিন্তু রয়েছে ফুল চাষের এক অনন্য স্থান – গোলাপগ্রাম। এই গ্রামের মনুষ গোলাপ চাষ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আরো লেখা পড়ুন –
১৬। সাভারে ভাকুর্তা এলাকায় রয়েছে সুপেয় মিষ্টি পানির খনি।
১৭। সাভারের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বংশি নদী।
১৮। সাভারের নামাবাজার খুবই পুরাতন, প্রাচীন এবং বিখ্যাত একটি বাজার। এই সাভার বংশী নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত। দৈনন্দিন জীবনের চাহিদার সকল জিনিসই আপনি এখানে পাবেন।
১৯। সাভারের নামাবাজারের পাশের পোড়াবাড়িতে রয়েছে বেদে পল্লি। যেখানে প্রতি সপ্তাহে সাপের হাট বসে। দেশ বিদেশের নানান প্রান্ত থেকে সাপ কিনতে লোক সমাগম হয় এই হাঁটে।
২০। সাভারের হেমায়েতপুর, রাজফুলবাড়িয়া, আশুলিয়াতে যে পরিমান গার্মেন্টস আছে বাংলাদেশে একটা ইপিজেডের বাহিরে মনে হয় এত গার্মেন্টস আর কোথাও নেই।
২১। সাভারে রয়েছে রেডিও তথ্য প্রেরন ও সম্প্রচার কেন্দ্র।
২২। Atlas Bangladesh এর মোটরসাইকেল পার্টস তৈরির কারখানা সাভারের কাঠগড়ায় অবস্থিত।
২৩। সাভারের কাঠগড়াতে ল্যাব এইড ছাড়াও বিভিন্ন ফার্মাসিটিক্যালসের ফ্যাক্টরি রয়েছে।
২৪। সাভারের নবিনগরে রয়েছে গলফ প্লেয়ারদের জন্য সুবিশাল গলফ ক্লাব।
২৫। সাভারের জাহাঙ্গীর নগরে রয়েছে বাংলাদেশ কেন্দ্রিয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার (Dairy Farm)।
২৬। সাভারে রয়েছে এনাম মেডিকেল কলেজ, এনাম ক্যান্সার হসপিটাল, গনস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ছাড়াও ডেল্টা মেডিকেল কলেজ (রাজফুলবাড়িয়াতে নির্মানাধীন)।
২৭। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়াও আরো অনেক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস সাভারের বিরুলিয়াতে অবস্থিত।
২৮। সাভারের ষ্ট্যান্ডে রয়েছে মাশরুম গবেষনা কেন্দ্র।
২৯। সাভারে রয়েছে শত বছরের প্রাচীন স্কুল সাভার অধর চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়।
৩০। সাভারের লাল মাটির কাঠাল খুবই সুস্বাদু।
৩১। সাভারে বিখ্যাত আরেকটি খাবার হলো কালিসাহা, যোগেশ, গোবিন্দ এর জাফরান, বালিশ সহ আর নানা পদের মিষ্টি ও দই।
৩২। সাভারের টিউবওয়েলের পানি অনেক মিষ্টি এবং সুপেয়। যা বিভিন্ন পরিক্ষা-নিরিক্ষার দ্বারা প্রমানিত এবং আর্সেনিক মূক্ত।
৩৩। সাভারের বিরুলিয়ায় রয়েছে নদির পাড় এবং শতবর্ষি দালান কোঠা।
এছাড়াও সাভারে আরো রয়েছে-গন বিশ্ববিদ্যালয়, মৃৎশিল্প পল্লি, নির্মানাধীন সাভার DOHS, মৎস উন্নয়ন কেন্দ্র, আরো আছে সেভেন রিং সিমেন্ট এর কারখানা (বিরুলিয়াতে), বিনোদন কেন্দ্র-ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দনপার্ক, মিনি চিড়িয়াখানা, সাভার পল্লীবিদ্যুৎ ঈদগাহ মাঠের স্ট্রিট ফুড, রাজফুলবাড়িয়াতে রয়েছে প্রাচিন মৎস আড়ত, ট্রলার তৈরির সীপইয়ার্ড সহ আরো নানান জিনিস ও স্থান। এসব কিছুই সাভারকে করেছে বিখ্যাত, করেছে সমৃদ্ধ। ঢাকা যদি বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র হয় তাহলে সাভার হচ্ছে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র।
আমাদের এই লেখায় সভার সম্পর্কিত আরো কোন তথ্য যদি ভুলক্রমে বাদ পরে যায় তবে আপনি কমেন্টে জানাতে পারেন। আপনিও অংশ নিন, সাভারকে তথ্য সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলুন।
১১/০৫/২০২২, ০৯.০০ AM