জীবনীবাংলাদেশ

কাজী নজরুল ইসলাম: জন্মদিনের শুভেচ্ছা

দেশপ্রেমিক, বিদ্রোহী কবি, সাহিত্যিক, সম্পাদক, গীতিকার, সুরকার এবং সুগায়ক।

(জন্মঃ- ২৪ মে, ১৮৯৯ – মৃত্যুঃ- ২৯ আগস্ট, ১৯৭৬)

বাজেয়াপ্ত নজরুল কাব্যগ্রন্থ এবং তাঁর কারাজীবনের কথা – 

তখন দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন বিপুল উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। নজরুল কুমিল্লা থেকে কিছুদিনের জন্য দৌলতপুরে আলী আকবর খানের বাড়িতে থেকে আবার কুমিল্লা ফিরে যান ১৯ জুনে- এখানে যতদিন ছিলেন ততদিনে তিনি পরিণত হন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীতে। তাঁর মূল কাজ ছিল শোভাযাত্রা ও সভায় যোগ দিয়ে গান গাওয়া। তখনকার সময়ে তার রচিত ও সুরারোপিত গানগুলির মধ্যে রয়েছে –

“এ কোন পাগল পথিক ছুটে এলো বন্দিনী মার আঙ্গিনায়, আজি রক্ত-নিশি ভোরে
একি এ শুনি ওরে
মুক্তি-কোলাহল বন্দী-শৃঙ্খলে” প্রভৃতি।

১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে আবার কুমিল্লায় ফিরে যান। ২১ নভেম্বর ছিল সমগ্র ভারতব্যাপী হরতাল- এ উপলক্ষে নজরুল আবার পথে নেমে আসেন; অসহযোগ মিছিলের সাথে শহর প্রদক্ষিণ করেন আর গান করেন, “ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও! ফিরে চাও ওগো পুরবাসী”- নজরুলের এ সময়কার কবিতা, গান ও প্রবন্ধের মধ্যে বিদ্রোহের ভাব প্রকাশিত হয়েছে।

এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে বিদ্রোহী নামক কবিতাটি। বিদ্রোহী কবিতাটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে মোসলেম ভারত এবং বিজলীতে একযোগে প্রকাশিত হয় এবং সারা ভারতের সাহিত্য সমাজে খ্যাতিলাভ করে। এই কবিতায় নজরুল নিজেকে বর্ণনা করেনঃ-

মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।

আমি চির বিদ্রোহী বীর –

বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!
‘মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেইদিন হবো শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল
আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
ভীম রণভুমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হবো শান্ত।’

‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি আগুনের গোলার মত যেন ছড়িয়ে পরল বাংলার সবখানে। সবার মুখে তখন একই জপমালা,” আপনারে ছাড়া কাহারে করি না কুর্নিস। নজরুলের এই বিদ্রোহী মন্ত্রে জেগে উঠলো গোটা বাংলা। বৃটিশ রাজের লাল ইটের শক্ত দালানেও এই বিষাক্ত মন্ত্র বার বার ধাক্কা খেল।

এবার সচকিত হয়ে উঠলো রাজশক্তি। রাতারাতি নজরুলের উপর সরকারী আমলাদের খবরদারির বেড়ে গেল। একে একে পাঁচটি নজরুল কাব্যগ্রন্থ সরকারি ভাবে বাজেয়াপ্ত হল । ১৯২২ সালে বাংলা ফৌজদারী বিধির ৯৯এ ধারায় সরকার নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ’যুগবাণী’ নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। অবিনাশের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলমকে জন্মদিনের প্রানঢালা অভিনন্দন।

তথ্যসূত্রঃ

১। নিষিদ্ধ নজরুল – শিশির কর।

২। কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা – মুজাফফর আহমেদ।

২৫/০৫/২০২২, ১০.২০ PM

N-Desk

ন্যাশনাল ডেস্ক যা কোথাও কোথাও N-Desk নামেও পরিচিত। এই ডেস্ক থেকে অবিনশ ব্লগে বাংলাদেশের চলমান ঘটনা তুলে এনে পেশ করা হয়ে থাকে। আপনিও চাইলে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে আমাদের লিখে পাঠাতে পারেন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া যে কোন তথ্য কিংবা ঘটনা সম্পর্কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *