আইন জ্ঞান (দ্বিতীয় পর্ব)
বাংলাদেশের আইনের কিছু প্রাথমিক দিক_
৬) দৈহিক মিলনে বাংলাদেশী আইনঃ আমি ইসলামী আইনের কথা বলছি না, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক অবিবাহিত নরনারীর দৈহিক সম্পর্ক করা দন্ডার্হ নয়। অর্থাৎ এর কোন শাস্তি নেই। ধরা পরা ব্যাক্তিদের জোর করে বিয়ে দেবার বা ফাইন করার (যদি পাবলিক নুইসেন্স না থাকে) আইনগত অধিকার পুলিশের নেই। জেনে রাখা ভাল, বাংলাদেশের আইনে পরকিয়া বা ব্যাভিচারের জন্য মেয়েদের বিরুদ্ধে শাস্তির কোন ব্যাবস্থা নেই।
কোন পুরুষ যদি কোন বিবাহিত নারীর সাথে তার স্বামীর সম্মতি ব্যাতীরকে দৈহিক সম্পর্ক করে তাহলে আইনে সেই পুরুষটির শাস্তির বিধান আছে, মেয়েটার নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেনাল কোডের ধারাঃ ৪৯৭ পড়ে দেখার বিধান দেয়া হল।
৭) কোর্টে কেসঃ কারো বিরুদ্ধে কোর্টে অভিযোগ করা মানেই সেটা আইনগত ভাবে প্রমান হয়ে যাওয়া না। বাংলাদেশের সাক্ষ্য আইন মতে কোন অভিযোগ প্রমান করার দায়িত্ব কেবলমাত্র অভিযোগকারীর, ব্যাপারটা শুনতে যত সহজ মনে হয় বাস্তবে তা নয়। আদালত বিচার করে সাক্ষ্য প্রমান ও প্রযোজ্য আইনের ভিত্তিতে। কি হওয়া উচিত, দেশ কি বলছে, সমাজ কি বলছে, টিভিতে টকমারানীরা কি বলছে, তাতে বাংলাদেশের কোর্টের কিছুই যায় আসে না। যদি আসলেই অন্যায়-অত্যাচার হয়ে থাকে কেবল তাহলেই কোর্টে অভিযোগ করুন।
ডালে লবন কম হওয়ায় যদি আপনার স্বামী আপনাকে থাপ্পর মেরে বসেন সেটা নিয়ে কোর্টে যৌতুক মামলা দায়ের করতে যাবেন না। তবে থাপ্পর মারার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। আর যদি যান তাহলে খাজনার চেয়ে বাজনা অনেক অনেক বেশী হয়ে যাবে। জেনে রাখা ভাল, কেস ‘পোক্ত’ করার জন্য আপনি যদি সত্যির সাথে মিথ্যা মেশান, ভাল সম্ভাবনা আছে আপনি কেস হেরে যাবেন। বাস্তব জীবনে উকিলেরা বাংলা ছবির উকিলদের মত আবেগী হয়না, কসাই যতখানি ‘মমতার’ সাথে গরু কাটে আপনার বিপক্ষ দলের উকিলও যে একই রকম ‘মমতার’ সাথে আপনার অভিযোগ কাটাকুটি করবেন, এই ব্যাপারটা মাথায় রাখলে আপনিই উপকৃত হবেন।
আইন সম্পর্কে আরো লেখা পড়ুন –
- চুক্তির প্রাথমিক ধারনা
- আইন জ্ঞান (প্রথম পর্ব)
- বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা
- পুলিশ বিনা কারনে আঘাত করলে নাগরিকের করণীয়
৮) থানায় এজাহার/জিডিঃ সত্যি কথা বলতে, যে কোন বিষয় নিয়ে থানায় জিডি করা যায়। এমনকি পোষা বেড়াল হারালে তা নিয়েও। তবে সব অভিযোগ কিন্তু আবার এজাহার হিসেবে থানায় লিপিবদ্ধ করা যায়না। কোন কোন অপরাধ এজাহার হিসেবে থানায় রেকর্ড হবে বাংলাদেশের আইনে তার একটা লিস্ট আছে। লিস্টে না পরলে অভিযোগ এজাহার হিসেবে থানায় নিবে না।
প্রায় সময়ই আপনার এজাহারটি ‘এজাহার’ হিসেবে না নিয়ে ‘জেনারেল ডায়েরী’ হিসেবে নেয়াটা পুলিশের আইনী সীমাবদ্ধতা, পুলিশী শয়তানী না। জেনে রাখা ভাল, থানা যদি আপনার বক্তব্য মতে এজাহার নিতে না চায় তাহলে আপনি একই বক্তব্য সম্বলিত অভিযোগ নিয়ে কোর্টে মামলা দায়ের করতে পারেন।
টিপসঃ খুন-যখম টাইপ কিছু না হলে মুখে মুখে আপনার বিশাল কাহিনী শুনিয়ে থানার পুলিশদের উৎপাত করতে যাবেন না। বাংলাদেশে কেবল আপনি একা বাস করেন না, আরো অনেকেই থানায় মুখে মুখে তাদের সমস্যা বলতে আসেন। আপনি যদি আপনার বক্তব্য লিখে বা প্রিন্ট করে নিয়ে আসেন তাহলে ঝটপট থানা থেকে বের হতে পারবেন। প্লাস থানার কোন কুতুব আপনার বক্তব্যকে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজানোর (সাংঘাতিক ক্ষতিকর!) সুযোগ পাবে না ।
অনেক সময় দেখা যাবে আপনি যা এজাহার মনে করছেন তা আসলে হবে জিডি। থানা থেকে আপনাকে আরো কিছু বক্তব্য পরিষ্কার বা যোগ করতে বলা হতে পারে। তাই পেনড্রাইভে আপনার বক্তব্যের একটা সফট কপি রাখা একান্তই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর থানা যদি কুবুদ্ধি বশতঃ আপনার অভিযোগ রাখতেই না চায় তাহলে কোর্টে কেস দায়েরের বিকল্প ব্যাবস্থা তো আছেই।
৯) পেশাজীবিদের সাহায্য নিনঃ উকিল মাত্রেই অসৎ না, যদিও সৎ আর দক্ষ উকিল পাওয়া যথেষ্ট কঠিন একটা কাজ, আইনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে এমন যেকোন কাজ উকিলের পরামর্শ মত করুন। উকিলের সামান্য ফি এড়াতে যেয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন এমন উদাহরন ভূরি ভূরি আছে।
১৫/০৪/২০২২, ১১.৪৫ PM