অনুভূতিহীন কিংবদন্তী
ভোরের আলো ফোটার আগেই জয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। জয় বিছানা থেকে নেমে জানালা ঘুলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে ভোরের নির্মল হাওয়া তার মুখে ঝাপটা দিলো। আহ্! কি সুন্দর পৃথিবী। এখন বসন্তকাল, প্রকৃতি তার জানান দিচ্ছে। জয় বাহিরে বেরিয়ে এলো। আজি বসন্তের পাতাঝরা এই দিনে, শুকনো পাতার মর্মর আওয়াজ তুলে সে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। জয়ের মনে মহামান্য রয়েডের প্রতি শ্রদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জয়ের আবেদনে সাড়া না দিলে কোনদিনই হয়ত একটি অজানাকে জানা হতো না।
জয় মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীকে দেখতে চেয়েছিল। তাই তার মস্তিষ্কের কপোট্রনে অত্যন্ত সূক্ষ্ণ ভাবে মানবিক অনুভূতি গুলো ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তার কপোট্রনের একটি সেলে সৃতি নামক কিছু কাল্পনিক তথ্য জমা করে দেয়া হয়েছে। আজ সে মানুষের অনুভূতি নিয়ে পৃথিবী দেখছে। বসন্তের পাতা ঝরা এই দিনের অপরূপ সৌন্দর্য সে খুব উপভোগ করছে। অত্যন্ত আশ্চার্যের ব্যপার হলো, তার কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছে করছে। তার চেয়েও আশ্চার্যের ব্যপার, তার মনে হচ্ছে সে নীলা নামের কাউকে ভালবাসত। সেই মেয়েটি তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এর বেশি কিছু তার কপোট্রনের সৃতি সেলে জমা করা হয়নি। বিরহ ব্যথায় জয় হু-হু করে কেঁদে উঠলো। কিন্তু তার যান্ত্রিক চোখ থেকে কোন তরল পদার্থ বের হলো না। এ সময় কেউ একজন বলে উঠলো,
– সে কি জয়, তুমি কাঁদছ কেন?
জয় হকচকিয়ে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
– শুভ সকাল মহামান্য রয়েড। কিন্তু আমাকে “আলফা আর কে ৭” না বলে “জয়” বলছেন কেনো?
মহামান্য রয়েড বললেন,
– কারন, তোমাকে মানুষের একটি নাম দেয়া হয়েছে।
আরো বিদেশী গল্পের অনুবাদ পড়ুন –
- নিহির
- বৃত্তবন্দী সুখ
- সহানুভূতির সনদ
- অপমানের উপহার
- শয়তানের যন্ত্রপাতি
- ভাঙা হৃদয়ের সংবিধান
- অহংকার ভালোবাসা ও কথিত নৌকা
জয় কৃতজ্ঞতার স্বরে বলল,
– ধন্যবাদ মহামান্য রয়েড। মানুষ হিসেবে এ পৃথিবীকে দেখে আমার মানুষ হতে ইচ্ছে করছে। ভালোবাসা, সুখ, দুঃখ দারুন উপভোগ্য। কিছুক্ষন আগে আমি প্রেমে ব্যর্থ হবার কারনে কাঁদছিলাম।
মহামান্য রয়েড বললেন,
– এ সবকিছুই আপেক্ষিক। তোমাকে মনে রাখতে হবে, তুমি যন্ত্রমানব। ক্ষনিকের জন্য তোমাকে মানবিক অনুভূতি দেয়া হয়েছে। মানুষের সময়কার পৃথিবীর একটি চিত্র তৈরি করা হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে, কয়েক হাজার ট্রিলিয়ন বছর আগেকার পৃথিবীর মানুষকে আবার যন্ত্রের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা।
জয়ের আবার মন খারাপ হতে শুরু করলো। মহামান্য রয়েড তা বুঝতে পেরে জয়ের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। জয় আনমনে তাকিয়ে রইলো, জানালার বাহিরে থাকা কৃত্তিম পৃথিবীর চিত্রের দিকে। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো, কয়েক হাজার ট্রিলিয়ন বছর আগে মানুষের পৃথিবীতে কেন জয় মানুষ হয়ে জন্মাল না? কেন সে নীলা নামের মেয়েটির ভালোবাসা পেলো না? আর এই আফসোসে আবারও সে হু-হু করে কেঁদে উঠলো। কিন্তু তার যান্ত্রিক চোখ থেকে কোন তরল পদার্থ বের হলো না।
১৩/০৪/২০২২, ০৮.১০ PM