অভিজ্ঞতা

দৌড়

দৌড়। দৌড়।।
দৌড়ান।

পাশের বাড়ির ছেলেটা ফটোগ্রাফি করে মাসে দুই লাখ টাকা আয় করে, ওয়াও। ফটোগ্রাফি করে এতো টাকা। তাহলে তো আমাকেও ভর্তি হতে হয়। খালি শাটার টিপ দিয়েই এতো টাকা। তাহলে আমিও পারবো। দে দৌড়। বেইলি রোডের পিঁয়াজু মামা খালি পিঁয়াজু বিক্রি কইরা ঢাকায় ৪টা বাড়ি করছে। দারুণ তো, তাহলে কি ফটোগ্রাফি শিখবো নাকি পিঁয়াজু বেচবো। পিঁয়াজু বানানো তো আরো সোজা। ঢাকায় ৪টা বাড়ি করা ঠেকায় কে। দে দৌড়। লিটন দাস, জাবি থেকে পাশ করে মাসে ১০ লাখ টাকা কামায়। কী সব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করে। এইটাতে তো দেখি টাকা আরও বেশি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, এইটা কোন কাজ। মাসে ১০ লাখ, ঠেকায় কে, তাহলে ফটোগ্রাফি আর পিঁয়াজু না বেইচা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করি।

দে দৌড়।

পাশের বাসার মামুন ভাই, বুয়েট থেকে পাশ করে ঢাকায় ১৩টা ফ্লাট কিনছে, ইস ছেলেটা যদি বুয়েটে চান্স পাইতো, তাইলে আর চিন্তা কী। ছেলেরে কড়া নির্দেশ, “তোরে বুয়েটে পড়তেই হইবো”। ছেলেও দিলো দৌড়। বুয়েটে পড়তেই হইবো। নাভিদ ভাই বলছে, বুয়েটে পড়লে দেশের সেরা সুন্দরীরা তোমার দরজায় আইসা সিরিয়াল দিয়া নক করবো আর আমেরিকার ভিসা ফ্রি। দে দৌড়। একদিকে বড়লোকের সুন্দরি মাইয়া, আরেকদিকে দেশে থাকলে, একটু সিনিয়য় হইলে বছরে ২৫/৩০ কোটি টাকা ব্যাপার না। তাইলে ফটোগ্রাফির দরকার নাই, পিঁয়াজু বিক্রির দরকার নাই, ইভেন্ট ম্যনেজমেন্টেরও দরকার নাই। বুয়েটেই পড়তে হইবো।

দে দৌড়।

ভাই শুনছেন, ডা. শায়লা ২৩ লাখ টাকা বেতনে অ্যাপোলো হাসপাতালে জয়েন করেছে। এরকম হাসপাতাল দেশে আরও হইতেছে। মাইয়ারে ডাক্তার বানাইতেই হইবো। মাসে ২৩ লাখ খালি বেতন। এরপরে তো ফ্ল্যাট, গাড়ি তো ঔষধ কোম্পানি কিন্নাই রাখছে। বছরে বছরে আবার ব্র্যান্ড চেইঞ্জও কইরা দেয়। আরে বাপরে বাপ। মাইয়ারে কড়া নির্দেশ, “সখিনা, তোরে ডাক্তার হইতেই হইবো, এইটা তোর বাপ দাদার স্বপ্ন ছিলো।”, অথচ সখিনার স্বপ্ন হয়তো ছিলো অন্য কিছু। একবার ডাক্তার হইতে পারলে আর ঠেকায় কে।

দে দৌড়।

ওদিকে খবর পাওয়া গেলো, রাজউকের দারোয়ান কোটি কোটী টাকা, কাস্টমস/রাজস্ব বিভাগের পিয়ন সিলেটে কোটি কোটি টাকার রাজপ্রাসাদ বানাইছে। ওমুক থানার ওসি, ১৩টা গার্মেন্টস দিছে, জমি কিনছে শত শত বিঘা। ওদিকে খবর হলো। পানি সাপ্লাইয়ের পাইপ কেনার ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে ঘাপলা দিয়া ৩ হাজার কোটি টাকা হাওয়া করে দিছে প্রধান প্রকৌশলী। তাইলে কী হওয়া উচিত? ঠিক আছে, এক প্রোজেক্টে যদি ৩ হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া যায়, তাইলে আর চিন্তা কী। যাই এবার পানি সাপ্লাই দেয়ার প্রধান প্রকৌশলী হইতেই হবে। ডিসিসান ফাইনাল। 
দে দৌড়।

কথায় কথায় ভুলে গেলাম, আসলে আমি কী হইতে চাইছিলাম। কোথায় যাওয়া দরকার ছিলো। গেলাম কোথায়। ব্যাংকে টাকার অভাব নেই, কিন্তু তারপরেও আমি অভাবগ্রস্ত। সেই অভাব মনের শান্তির অভাব, যার অভাবে আসলে জীবনের ষোল আনাই মিছে। মিটার রিডার কোটি টাকার মালিক, শিক্ষাভবনের দারোয়ারের ইনকামও বেসুমার। সরকারি চাকুরি মানেই এক একটা ব্যাংক। টাকার কোন অভাব নেই। কিন্তু আমারও একটা স্বপ্ন ছিলো, সেই স্বপ্নের খবর কী? স্বপ্নকে কবর দিলে, সে আবার জেগে উঠবে। সেই স্বপ্নের পেছনে দৌড়ানোটাই দরকার ছিলো, খুব দরকার ছিলো। দৌড় দেয়ার আগেই ঠিক করতে হবে, ঠিক কোথায় দৌড় দিতে হবে। জায়গাটা ঠিক করতে পারলে, ভালোভাবেই টাকা আসবে আর শান্তিও থাকবে। দৌড়টা দিতে হবে, তবে ভেড়ার পালের মতো উদ্দেশ্যহীন নয়, মানুষের মতো।

/০৮/২০২২, ১০.০০ AM

Shamim Rony

পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। খুব কাঠখোট্টা বিষয় নিয়ে বসবাস। চেষ্টা করি সমস্যার গভীরে যেয়ে ডুবুরীর মুক্তা আরোহনের মতোই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে আনতে। জানার আগ্রহ প্রবল। এখনো নিজেকে এই বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের ছাত্র বলেই মনে করি। টেকনোলজি ভালোবাসি, সেই সাথে ভ্রমন পিপাসুও বটে। টেক দুনিয়ার হাল-চাল, বিদেশী অনুবাদ ও বিদেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতার রসদ সম্বল করেই কলম ধরেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *