হিজড়া সমস্যাঃ প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
দুজন হিজড়া ছিল। বাচ্চা কোলে নিয়ে আর দিবেনা, টাকা দিতে হবে। মা পঞ্চাশ টাকা বের করে দিল। কিন্তু তাদের দাবী পাঁচশ টাকা। বাচ্চাকে নিয়ে যেই দৌড় দিতে লাগলো, অসহায় মা অবশেষে পাঁচশ টাকা দিতে রাজি হল। টাকা দিয়েই দিবে, এর মাঝে আমরা কয়েকজন গিয়ে থামিয়ে দিলাম। এক জনের হাতে লাঠি। ধমক দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হল। গালি আর তালি দিতে দিতে চলে গেল, হুমকি দিল দলবল নিয়ে আবার আসবে।
হিজড়া নাম নিয়ে এসব চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাস নতুন কিছু না। কারো বাচ্চা হলেই বাচ্চাকে জিম্মি করে হাজার হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। বিয়ে হলে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে হামলা করে টাকার জন্য। অফিসে অফিসে গিয়ে টাকা নেওয়া নতুন কিছু না। ট্রেনেও এদের অত্যাচারে ভালমতো ভ্রমণ করা যায় না। দিন তিনেক আগে চাঁদার টাকা না দেওয়ায় রাজশাহী ভার্সিটির এক শিক্ষককে মেরে আহত করে হিজড়ারা। গত কয়েকদিন আগে চাঁদা না দেওয়ায় সিলেটে এক লোককে কামড় দিয়ে আহত করেছে। রাস্তায় সিএনজিতে বা গাড়িতে এদের টাকা না দিলে বিব্রতকর পরিবেশ তৈরি করে। অনেকে আছে ন্যাংটা হয়ে যায় কিংবা প্রসাব করে দেয়।



জন্মগতভাবে জীনগত ত্রুটির কারণে মানুষ হিজড়া হয়। হিজড়া বিভিন্নরকম হয়। ছেলে মেয়ে – উভয় যৌনাঙ্গই থাকে, অর্থাৎ পেনিস যোনি দুটোই উপস্থিত। দেখতে ছেলে কিন্তু যৌনাঙ্গ মেয়ের। দেখতে মেয়ে কিন্তু যৌনাঙ্গ ছেলের। ছেলে মেয়ে কোন যৌনাঙ্গই নেই। ইসলামী বিধানমতে, যদি কারো শারীরিক গঠনে পুরুষ যৌনাংগের অস্তিত্ব থাকে, তাকে পুরুষ হিসেবেই ধরতে হবে। অনুরুপভাবে মেয়ের গঠন হলে মেয়ে ধরতে হবে। যদি ছেলে-মেয়ে উভয় যৌনাঙ্গ থাকে, তাহলে প্রসাব করে কোনটা দিয়ে সেটার উপর নির্ভর করে তাকে বাচ্চাকালে ছেলে বা মেয়ে হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। এরপর প্রাপ্ত বয়স্ক হলে যদি স্বপ্নদোষ হয় কিংবা পেনিস দিয়ে সেক্স করার মত সামর্থ্য হয় কিংবা পুরুষদের মত দাড়ি গোঁফ উঠে, তাহলে তিনি পুরুষ। আর যদি মাসিক শুরু হয়, ব্রেস্ট বড় হয় কিংবা অন্যান্য সুনির্দিষ্ট মেয়েলি বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পায় তাহলে তাকে নারী হিসেবে ধরতে হবে।
এগুলোর কোন বৈশিষ্ট্য না থাকলে, তাকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে কাউন্ট করতে হবে। তবে বেশিরভাগ হিজড়াদের সুনির্দিষ্ট লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য থাকে। কিন্তু সুবিধা নেওয়ার জন্য তারা সেটা প্রকাশ করে না। ইসলামে ছেলে হয়ে মেয়ে সাজা কিংবা মেয়ে হয়ে ছেলে সাজা মারাত্মক গুনাহ, হারাম কাজ এটি। কেউ যতই হিজড়া হোক না কেন, তাদের কাছেও মেয়েদের পর্দা করতে হবে, অর্থাৎ হিজড়াদের মেয়ে ভেবে তাদের সামনে মেয়েদের খোলামেলা হওয়া যাবে না। প্রকৃত হিজড়ারা ভদ্র নম্র বিনীত স্বভাবের হয়। জন্মগতভাবে কেউ হিজড়া হয়ে জন্মালে তার প্রতি আমাদের সহানুভুতি অবশ্যই দেখানো উচিত। কিন্তু কারো কাছ থেকে জোর করে কিছু আদায় করার অধিকার তাদের নেই।



বর্তমানে অপারেশন করে পেনিস কেটে নকল হিজড়া সেজে অনেকেই চাঁদাবাজি শুরু করেছে। আবার অনেক সময় বাচ্চাদের চুরি করে নিয়ে গিয়ে পেনিস, অণ্ডকোষ কেটে হিজড়া বানানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিয়েছে। বয়স্ক হিজড়াদের ভাতার ব্যবস্থা করেছে, শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে এবং চাকুরী ক্ষেত্রেও সুবিধা দিচ্ছে। সবচেয়ে ভালো হয় সরকারীভাবে মেডিকেল টেস্টের মাধ্যমে প্রকৃত হিজড়াদের স্মার্ট আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করা হলে। তাহলে ভুয়া হিজড়াদের দৌড়াত্মো রোধ করা সম্ভব হবে। সমস্যা হল হিজড়ারা যখন কাউকে আক্রমণ করে, আশেপাশের কেউ এগিয়ে আসে না। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। এটাই তাদের আস্কারা পাওয়ার মূল কারণ। এখন আমাদের জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। যখনই কোন হিজড়া চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হবে, সবাই একযোগে সেটার প্রতিহত করতে হবে। প্রকৃত হিজড়াদের প্রতি সহানুভূতিশীল হই, চাঁদাবাজ হিজড়াদের একযোগে প্রতিরোধ করি।
১৭/০৪/২০২২, ১০.৩০ PM