ব্যক্তিগত

ফেবুর শেয়ার বানিজ্য ও আমাদের সোয়াব কামনা

অসুস্থ বাবার সামনে হাতে একটি কাগজ নিয়ে বসে আছে ৮-৯ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে। এমনি একটি ছবি আমার ইনবক্সে কম করে হলেও ৪/৫ জন পাঠিছেন। আর লিখেছেন ওর বাবার অপারেশন করতে হবে। আর ছবিটা সবাইকে সেন্ড/শেয়ার করতে। যত বেশী শেয়ার হবে তত বেশী টাকা ফেইসবুক তাকে দেবে। আরে ভাই লোকটার কি হয়েছে? কোথায় থাকে? কি অপারেশন? কত টাকা লাগবে? ভ্যালিড মেডিক্যাল পেপারস কই? কার অধিনে চিকিৎসা নিচ্ছে? সরাসরি যোগাযোগের উপায় কি? এর বিস্তারিত কোন বিবরন নাই। আসছেন লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের বন্যার তাদের ভাসিয়ে দিতে থুক্কু টাকা ইনকাম করায় দিতে। যত্তসব গাঁজা খুঁড়ি ব্যপার স্যপার। আর তাছাড়া জুকার বার্গের কি আর খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নাই, যে লাইক – কমেন্ট এবং শেয়ারের উপর নির্ভর করে টাকা/পাউন্ড/ডলার বিলাবে?

এলাকার এক গরীব ছেলে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে আমার অফিসে এসেছিলো সাহায্যের আশায়। ঐ মূহুর্তে যতটুকু পেরেছি, করেছি। পরে তার চিকিৎসা ও আর্থিক অবস্থার বিবরন সংবলিত একটি প্রথম আলো পত্রিকা আমার হাতে দিয়ে বলে গেলো, আমি যেনো আমার বিদেশে বসবাসরত বন্ধুদের কাছে তার হয়ে সাহায্য চাই। আমি তাকে নিরাশ করিনি। পত্রিকার কাটিং সংযুক্ত করে সাহায্যের আবেদন করলাম বিদেশে বসবাসরত বাঙ্গালী থুক্কু পুরোপুরি বৈদেশি হয়ে যাওয়া বন্ধুদের। কেউ কেউ আমার ম্যাসেজ সিন করেই শেষ। আর যারা নিতান্তই চক্ষু লজ্জায় পরে গেলো, তারা খুব ছোট্ট করে দায় সারা রিপ্লাই দিলো এই বলে, “চেষ্টা করবো।” কিন্তু এর পরে কারো কোন খোঁজ পাইনি। পুরো ব্যপারটায় আমি খুব লজ্জিত ও মর্মাহত হলাম। কিন্তু বাস্তবতা মেনে নিয়ে ফলোআপ ষ্ট্যাটাস দিয়েছিলাম নিজের টাইমলাইনে, এর বেশি কিছু নয়। এরকম হাজারো ম্যাসেজ অকারনে শেয়ার হচ্ছে। ফাইজলামির ও একটা সীমা থাকে, এসব দেখলে মনে হয় – সীমা নিজেই ফাইজলামির হাত থেকে বাঁচতে আত্নহত্যা করেছে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা – আপনার বাবা-মা-ভাই-বোন কেমন আছে, তারা সময় মতো খেলো কিনা, আপনার মা কিংবা বাবার ইন্সুলিনের টাইম হলো কিনা, ছোট ভাই/বোন ঠিক মতো পড়ালেখা করছে কিনা, প্রতিদিন না হোক অন্তত সপ্তাহে একদিন পরিবারের সবার সাথে বসে রাতের খাবার খান কিনা, আপনার কৃত কাজ কিংবা কথার দ্বারা অন্য কেউ আহত হলো কিনা সেগুলায় মনোযোগ দেন। আর এমন গরীব/দুঃস্থ/অসহায় বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইলে ঘর কিংবা অফিসের এসি রুমে বসে লাইক/কমেন্ট/শেয়ার না করে ছুটে যান তাদের পাশে। কে আপনার ডাকে সাড়া দিলো, কে দিলো না সেসব নিয়ে একদম ভাব্বেন না। কাজ করে যান নিরবে নিভৃতে। বোঝা গেলো? পরিশেষে একটা কথা না বলে পারছি না, আমাদের একটা মুদ্রাদোষ হচ্ছে শেয়ার দেয়া। যা পাই তাই শেয়ার মারি। কারনে – অকারনে চক্ষু বুজে শেয়ার মারি। আর শেয়ার মেরে কোটি কোটি সোয়াব নিয়ে জান্নাতে প্রবেশের চেষ্টা করি। শিক্ষিত মানুষ হয়ে এগুলা ক্যামনে করেন/পারেন? কোন যুক্তিতে? থাক, আপনার যুক্তি আপনার কাছেই থাক। তবে ভাই, মাঝে মাঝে মাথা ঠুয়াইয়া ভাইংগা ফেলতে ইচ্ছে করে। আরে না না, আপনাদের মাথা না। আমার নিজের মাথার কথাই বলছি। পুনশ্চ – বোঝা গেলো ব্যপারটা?

১৪/০৯/২০২২, ১০.০০ AM

Shamim Rony

পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। খুব কাঠখোট্টা বিষয় নিয়ে বসবাস। চেষ্টা করি সমস্যার গভীরে যেয়ে ডুবুরীর মুক্তা আরোহনের মতোই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে আনতে। জানার আগ্রহ প্রবল। এখনো নিজেকে এই বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের ছাত্র বলেই মনে করি। টেকনোলজি ভালোবাসি, সেই সাথে ভ্রমন পিপাসুও বটে। টেক দুনিয়ার হাল-চাল, বিদেশী অনুবাদ ও বিদেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতার রসদ সম্বল করেই কলম ধরেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *