ডিএনএস কিভাবে কাজ করে (শেষ পর্ব)
টিএলডি সার্ভার –
পৃথিবীতে হরেক রকম TLD আছে যেমনঃ .com, .net, .org, .xyz, .ninja, .edu, .biz, .music ইত্যাদি। এই ধরণের প্রত্যেকটা TLD নিয়ন্ত্রণের জন্য আছে এক বা একাধাকি TLD সার্ভার। যেমনঃ .com এর টিএলডি সার্ভারের নিয়ন্ত্রক হল Verisign। এই টিএলডি সার্ভারের আবার কাজ কি? যেমন ধরেন .com এর জন্য যে টিএলডি সার্ভার আছে তার কাছে পৃথিবীর যত .com ডোমেইন আছে তাদের নেম সার্ভারের এড্রেস সংরক্ষণ করা আছে। তার মানে facebook.com এর নেম সার্ভারের নাম কি এটা জানে শুধু Verisign কোম্পানির .com টিএলডি সার্ভার। আর কেউ তা জানে না।
রিসলভারঃ কেমন আছেন ভাই?
টিএলডি সার্ভারঃ এই গরমে আর কেমনে ভালা থাকুম ভাই? যে গরম পড়সে। যাউকগা কামের কথা কন।
রিসলভারঃ আমারে বাপ অফ দি বাপ, সবার বাপ দ্যা রুট সার্ভার আপনের কাছে পাঠাইসে। সে কইলো আপনে নাকি facebook.com এর আইপি জানেন?
টিএলডি সার্ভারঃ নারে ভাই আমি ওই সব খবর রাখি না। তবে facebook.com এর নেম সার্ভারের ঠিকানা জানি আমি। যাও ওদের জিগাও।
রিসলভারঃ ওকে বস ঠিকানা কন।
টিএলডি সার্ভারঃ a.ns.facebook.com আরেকটা হইলো b.ns.facebook.com এদের কাসে যাও।
তথ্য ও প্রযুক্তি দুনিয়ার আরো লেখা –
নেইম সার্ভার –
আপনারা যারা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর সাথে জড়িত, তারা অবশ্যই ডোমেইন সার্ভারে পয়েন্ট করার সময় কন্ট্রোল প্যানেলে নেম সার্ভার ব্যবহার করেছেন। সেখানে আপনি ডোমেইন রেজিস্টার করের পরে ডোমেইনের কন্ট্রোল প্যানেল থেকে ns1.example.com, ns2.example.com এভাবে নেম সার্ভার যোগ করে থাকেন। এই ধরনের নেম সার্ভারকে বলা হয় অথোরেটেটিভ নেম সার্ভার। এই নেইম সার্ভারের কাছেই জমা থাকে আপনার বহু আকাঙ্ক্ষিত সাইটের আইপি। ধরেন আপনি যদি DigitalOcean এ আপনার সাইট হোস্ট করেন। আর ডিএনএস ও যদি সেখানেই হোস্ট করেন তবে আমরা জানি যে, DigitalOcean এর নেম সার্ভারের এড্রেস হইলো –
যাই হোক আমাদের রিকারসিভ রিসলভার আগের স্টেপে TLD সার্ভার থেকে facebook.com এর নেম সার্ভারের ঠিকানা পেয়ে গেছে আর। আমরাও আমাদের স্টেপের প্রায় শেষে এসে পড়েছি। রিসলভার এবার a.ns.facebook.com বা b.ns.facebook.com এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে।
রিসলভারঃ ভাই আর তো পারি না, দৌড়াইতে দৌড়াইতে হয়রান আমি। আর কত ঘুরাইবেন আপনারা। আপনি কি আমাকে facebook.com এর আইপি দিবেন নাকি আপনেও আবার আরেক জায়গায় পাঠাইবেন।
নেইম সার্ভারঃ তোর সাধনা শেষ হইয়াছে বৎস। এই নে facebook.com এর আইপি 31.13.65.36 এখানে গেলেই ফেসবুক-কে পাবি। এখন যা ভাগ! গেলি?
এবার আপনার রিকারসিভ রিসলভার খুশিতে বাক বাকুম হইয়া এক লাফে আপনার OS এর কাছে ফিরে আসে।
রিসলভারঃ এই নাও তোমার আইপি 31.13.65.36 কই ছিলাম না জান সাত সমুদ্র তের নদী পার হইয়া হইলেও ফেসবুকের আইপি তোমারে আইনা দিমু।
ওএসঃ ওহ জান তুমি আমাকে কতু ভালোবাসো।
এই লেখার অন্য পর্বগুলো পড়ুন –
এবার আপনার ওএস আপনার ব্রাউজারকে বলে নাও বেবি তোমার ফেসবুকের আইপি। এখন ব্রাউজার আইপি জানে তাই 31.13.65.36 নাম্বার সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করে আপনার সামনে ফেসবুককে এনে হাজির করে। খেয়াল করেন আপনি যদি facebook.com এ ব্রাউজ না করে সরাসরি এই আইপিতে 31.13.65.36 ব্রাউজ করেন আপনি কিনতু ঐ একই সাইটে ফরওয়ার্ড হন। তার মানে এক ঝলকে পুরো প্রসেসটা হল অনেকটা এমন –
ব্রাউজার —> ওএস —> রিকারসিভ রিসলভার —> রুট সার্ভার —> টিএলডি সার্ভার —> নেইম সার্ভার —> কাংখিত সাইটের আইপি —> ফাইনালি ব্রাউজিং শুরু –
আরে খাড়ান কই যান? শ্যাষ হয় নাই তো। এখন কথা হল এত লম্বা প্রোসেস কমপ্লিট হতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিলি সেকেন্ড। মানে ১ সেকেন্ডের ১ হাজার ভাগের কয়েক ভাগ মাত্র। পুরো প্রোসেসের সব কুয়েরি অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে প্রায় আলোর বেগে আদান-প্রদান হয়ে থাকে। কত সময় লাগবে তা অনেকটাই আপনার পিসির হার্ডওয়্যার, নেট কানেকশন স্পীড, স্পিড ল্যাটেনসি এই সব বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
শেষ কথাঃ এতক্ষণ ধরে আপনি যা পড়লেন তা আমি অনেক সহজে বলার চেষ্টা করেছি। রিয়াল ওয়ার্ল্ডে প্রোসেসটা আরও জটিল। সেই সব মহান কম্পিউটার সাইন্টিস্টকে ধন্যবাদ দেন যারা এই জটিল সিস্টেম ডিজাইন করেছে। তারা না থাকলে আজ ফেসবুক থাকতো না। আর ফেসবুক না থাকলে আপনি আমার এই বিশাল পোস্ট খানাও পড়তেন না। আসলে এই প্রোসেসটা এর চেয়ে আর ছোট করে বলা সম্ভব না। আমি অনেক চেষ্টা করে এই সাইজে নিয়া এসেছি। যাই হোক, সিস্টেম ডিজাইনারদের মত বসেরা না থাকলে আজও আমরা থাকতাম সেই আদিম মানুষদের আদিম গুহায়। কোন গহীন জঙ্গলে বসে। খট খট করে কি-বোর্ড না চেপে দেখা যেত বর্শা হাতে খালি গায়ে আন্ডারওয়্যার পড়ে কোন বাঘের সাথে লড়াই করছি।
২২/০৫/২০২২, ১০.০০ AM