ইসলামধর্ম

জাকাত দিন, সম্পদ পবিত্র রাখুন

কোনো মুসলমান নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে সেদিন থেকে এক চান্দ্রবছর (৩৫৪ দিন) পূর্ণ হলে তাঁকে জাকাত প্রদান করতে হয়। এরপর তিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকলে প্রতি চান্দ্রবছরে একবার জাকাত প্রদান করতে হয়। নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি সোনা, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর কোনো একটির সমমূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসার পণ্য। বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা, ট্রাভেলস চেক, ব্যাংক চেক, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, পোস্টাল অর্ডার, মানি অর্ডার, শেয়ার সার্টিফিকেট, কোম্পানি শেয়ার, ডিও লেটার, সঞ্চয়পত্র, সিকিউরিটি মানি, জামানত, প্রাইজ বন্ড, ট্রেজারি বন্ড ইত্যাদি; ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা আমানত; যেমন বিমা, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট, মেয়াদি সঞ্চয়, কিস্তিতে জমা, এফডিআর, ফিক্সড ডিপোজিট, পোস্টাল সঞ্চয়ী, বিশেষ সঞ্চয়, পেনশন স্কিম ও অফিশিয়াল প্রভিডেন্ট ফান্ড, স্বেচ্ছা প্রভিডেন্ট ফান্ড, ডিভিডেন্ড, সমবায় সমিতি (এসব জাকাত হিসাব তারিখে নগদায়ন করলে যা পাওয়া যাবে); ফেরত পাওয়ার যোগ্য প্রদত্ত ঋণ, ব্যবসার পণ্য ও মূল্যবান শোপিস বা মূলবান পাথর—হীরা, জহরত, মণিমাণিক্য, মুক্তা ইত্যাদি (এসবের বর্তমান বাজারমূল্য অর্থাৎ বর্তমানে নতুন কিনতে যে মূল্য); শেয়ার সার্টিফিকেটের নামিক মূল্য ও বাজারদর হিসাবে ধরতে হবে।

ব্যবসায়িক নার্সারি, হর্টিকালচার, বীজ উৎপাদন খামার, কৃষি খামার, বনজ বৃক্ষ খামার, ফলদ বৃক্ষ খামার, ঔষধি গাছের খামার, চা-বাগান, রবারবাগান, তুলাবাগান, রেশমবাগান, আগরগাছের বাগান, অর্কিড নার্সারি ও ফুলবাগান, মুরগির খামার, মাছের খামার ইত্যাদি এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সামগ্রী—এসবের বর্তমান বাজারে বিক্রয়মূল্য হিসাবে ধরতে হবে। নিসাব পরিমাণ ও তদূর্ধ্ব সম্পদের মালিক তাঁর জাকাতযোগ্য সব সম্পদের জাকাত প্রতিবছর আড়াই শতাংশ (৪০ ভাগের ১ ভাগ) হারে প্রদান করতে হয়। চান্দ্রবর্ষ ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে হয়। যেহেতু সৌরবর্ষ ৩৬৫ দিনে বা ৩৬৬ দিনে হয়, তাই সৌরবর্ষ অপেক্ষা চান্দ্রবর্ষ ১০ বা ১১ দিন কম। সৌরবর্ষ হিসেবে জাকাত প্রদান করতে চাইলে শতকরা ২.৫ শতাংশের পরিবর্তে ২.৫৮ শতাংশ দিতে হবে। অথবা মূল জাকাতের সঙ্গে অতিরিক্ত ১১ দিনের হিসাব যোগ করতে হবে। অনুরূপ কারও জাকাত সমাপনী হিসাব তারিখ রমজানে না হলে, তিনি অতিরিক্ত সময়ের জাকাত সমন্বয় করে জাকাত হিসাব তারিখ রমজানে নিয়ে আসতে পারেন।

জাকাত হিসাব সমাপনী দিনে

সোনা, রুপা, নগদ টাকা ও ব্যবসাপণ্য – এ তিন খাতে যত সম্পদ থাকবে, পুরোটারই জাকাত দিতে হবে।

জাকাত বর্ষপূর্তি বা জাকাত হিসাব সমাপনী দিনে সোনা, রুপা, নগদ টাকা ও ব্যবসাপণ্য—এ তিন খাতে যত সম্পদ থাকবে, পুরোটারই জাকাত দিতে হবে। বছরের মধ্যে যেকোনো সময় অর্থাগম ঘটলে, বছর শেষে জাকাত প্রদান করতে হবে। প্রতিবছর একই তারিখে ও একই সময়ে জাকাতের হিসাব করতে হয়। যেমন: ১ রমজান সন্ধ্যা ছয়টা। এই সময়ের এক সেকেন্ড আগে যে সম্পদ আসবে, তা জাকাত হিসেবের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই সময়ের এক সেকেন্ড পরে যে সম্পদ আসবে, তা পরবর্তী বছরের হিসাবে যাবে। জায়গাজমি, বাড়ি ও গাড়ি, যা বিক্রির জন্য রাখা হয়নি, তা জাকাত হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি, যেগুলো বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে, সেগুলোর বর্তমান বিক্রয়মূল্য (বাজারদর) জাকাতের হিসাবে আসবে এবং এর মূল্য হিসাব করে প্রতিবছর জাকাত দিতে হবে।


ইসলামের বিধি বিধান সম্পর্কে অন্যান্য লেখা –


যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির মালিকদের সম্পদ আলাদা হিসাব করে যার যার জাকাত দিতে হবে। এ সম্পদের মালিক যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন বা তঁার অন্য সম্পদসহ যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ হয়, তবে জাকাত তাঁর দিতে হবে; অন্যথায় নয়। যৌথ মালিকানায় কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান সম্মিলিত সম্পদ থেকে জাকাত প্রদান করলে, সে সম্পদের জাকাত পুনরায় দিতে হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে মালিকদের বা অংশীদারদের পূর্বানুমতি নিতে হবে। কোম্পানির যদি এমন কোনো অংশীদার থাকে, যার সম্পদ নিসাব পরিমাণ নয় তাহলে তাকে জাকাত প্রদানে বাধ্য করা জায়েজ নয়। আবার নিসাবের মালিক হলেও সব অংশীদারের জাকাত বর্ষের শুরু ও শেষ এক না-ও হতে পারে।

তাৎক্ষণিক পরিশোধযোগ্য ঋণ এবং কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ঋণের চলমান কিস্তির পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদের জাকাত দিতে হবে। কখনো দেখা যায় কোনো ঋণগ্রহীতার সম্পদের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশি। এ অবস্থায়ও তাঁদের ঋণ ধর্তব্য হবে না; বরং তার উক্ত তিন খাতের সমুদয় সম্পদেরই জাকাত প্রদান করতে হবে। কারণ, যদি তাঁদের এ ব্যবসায়িক ঋণকে প্রকৃত ঋণ হিসেবে গণ্য করে তাঁর সম্পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়, তবে তাঁরা দেউলিয়া হিসেবে নিজেরাই জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত বলে পরিগণিত ও বিবেচিত হবেন।

১৮/০৪/২০২২, ১০.৪৫ AM

তথ্যসূত্রঃ

১। প্রথম আলো পত্রিকা (অনলাইন ভার্সন)।

N-Desk

ন্যাশনাল ডেস্ক যা কোথাও কোথাও N-Desk নামেও পরিচিত। এই ডেস্ক থেকে অবিনশ ব্লগে বাংলাদেশের চলমান ঘটনা তুলে এনে পেশ করা হয়ে থাকে। আপনিও চাইলে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে আমাদের লিখে পাঠাতে পারেন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া যে কোন তথ্য কিংবা ঘটনা সম্পর্কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *