আইন ও আদালতবাংলাদেশ

আইন জ্ঞান (প্রথম পর্ব)

বাংলাদেশের আইনের কিছু প্রাথমিক দিক_

১) তাজ্যপুত্রঃ ইসলামে বা বাংলাদেশের আইনে মুসলিমদের জন্য ‘তাজ্যপুত্র’ বলে কোন কিছু নেই। ‘তোকে তাজ্যপুত্র করলাম’ এ ধরনের ডায়লগের মুল্য কেবল বাংলা সিনেমায় আছে। বাস্তবে কোন সন্তানকে সম্পত্তি থেকে সম্পূর্ন বঞ্চিত করতে চাইলে অভিভাবককে মৃত্যুবরন করার পূর্বেই হয় তার সব সম্পত্তি বিক্রি করে ফেলতে হবে। অথবা অন্য সন্তানদের দান করে যেতে হবে। আর এই দানটা হতে হবে অভিভাবকের জীবিতাবস্থায়।

কোন অভিভাবক যদি জীবনকালে তার সব সম্পত্তি এই ভাবে বিক্রি বা দান না করেন তাহলে তার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ‘তাজ্যপুত্র’ ইসলামী ফারায়েজ অনুযায়ীই পাবে। সেই সাথে আরো জেনে রাখা ভাল, সমস্ত ওয়ারিশের সম্মতি ব্যাতীত কোন মুসলিমের উইল/অসিয়ত তার সমস্ত সম্পত্তির কেবল এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কার্য্যকর।

২) দেনমোহরঃ কাবিন এবং স্ত্রী ‘সংসর্গ’ করার পর দেনমোহর এর পুরো টাকাই স্ত্রীর প্রাপ্য। সত্যিকার ইসলামী হিসাব মতে স্ত্রীকে স্পর্শ করার আগেই দেনমোহর এর পুরো টাকা চুকিয়ে দেবার নিয়ম। জেনে রাখা ভাল, স্ত্রী নিজে থেকে দাবী ছেড়ে না দিলে কোন অবস্থাতেই দেনমোহর এর টাকা মাফ হয়না। স্ত্রীর নিজে থেকে তালাক দেয়া, স্ত্রীর পরকীয়া, স্বামীকে যত্ন না করা, বাচ্চাদের খেয়াল না করা, কোন কিছুই দেনমোহর পরিশোধের দায়িত্ব থেকে স্বামীদের মুক্তি দেয়না।

স্ত্রী যে কোন সময় পাওনা দেনমোহর দাবী করতে পারেন ।এবং তিনি তা দাবী করলে স্বামী তা পরিশোধে বাধ্য থাকবেন। তবে জেনে রাখা ভাল, তালাক হয়ে গেলে একটি নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে দেনমোহর এর টাকা চাইতে হয়, অন্যথায় দাবী তামাদি (এক্সপায়ার) হয়ে যাবে।

৩) মায়ের সম্পত্তিঃ মুসলিম মেয়েরা মায়ের সম্পত্তি ছেলেদের চেয়ে বেশী পায়না। মেয়েরা মায়ের সম্পত্তি বেশী পায় এই আজগুবী ধারনাটার আইনগত ভিত্তিটা কেউ যদি আমাকে জানাতে পারেন তাহলে তার প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবো।


আইন সম্পর্কে আরো লেখা পড়ুন –


৪) পিতা-মাতার সম্পত্তিঃ মুখে যতই বলা হোক না কেন, যতদিন বাবা-মা বেঁচে আছেন তাদের সম্পত্তি কেবল তাদেরই, সন্তানদের না। তাদের মৃত্যুর পর সন্তানরা ওয়ারিশ হিসেবে সম্পত্তি পাবার আশা করতে পারেন কিন্তু পিতা-মাতা জীবিত থাকাকালিন সময়ে সন্তানরা তাদের কাছ থেকে সম্পত্তি দাবী করতে পারে না। আইনে এ ধরনের দাবীর কোন অধিকার বা ভিত্তি নেই।

সন্তানের আর্থিক অবস্থা যত খারাপই হোক না কেন, পিতা- মাতার জীবিতাবস্থায় সন্তানকে সম্পত্তি হস্তান্তর করা পিতা-মাতার দায়িত্বের মধ্যে পরেনা। আরো জেনে রাখা ভাল, পিতা-মাতা তাদের সম্পত্তি কি করবেন বা কাকে দিয়ে যাবেন সেটা নিয়েও সন্তানদের কথা বলার কোন আইনগত অধিকার নেই।

৫) ছেলেদের তালাকের ক্ষমতাঃ বাংলাদেশী আইনে ছেলেদের তালাকের ক্ষমতা ‘এবসলিউট’। এ জন্য ছেলেদের কোন কারন দর্শাতে হয়না। দবির যদি তার স্ত্রী জুলেখাকে তালাক দিতে চায় তাহলে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টও আইনগত ভাবে সেটা ঠেকাতে পারেন না। অপরদিকে কাবিনে মেয়েদের সাধারনত কিছু গ্রাউন্ড দেয়া থাকে যা হলে মেয়েরা তালাক দিতে পারেন।

কাবিনে কিছু উল্লেখ না থাকলেও কোর্টে কেস করে মেয়ে অতি সহজে তালাক নিতে পারেন। তালাকের ব্যাপারে কোর্ট মেয়েদের প্রতি অতি মাত্রায় ‘পক্ষপাতিত্ব’ করে থাকে। জেনে রাখা ভাল, তালাক দিলে মেয়েরা কেবল তিন মাসের ভরন পোষন এবং অবশিষ্ট দেনমোহর এর টাকার অধিকারী হয়। স্বামীর সাথে যুক্তভাবে কোন কিছু না কিনে থাকলে স্বামীর সম্পত্তি থেকে আর কোন কিছু তারা পায়না।  

১০/০৪/২০২২, ০৮.২০ PM

Kazi Wasimul Haque

পেশায় আইনজীবি। কোর্ট প্র্যাক্টিসের পাশাপাশি আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখতে ভালোবাসি। আমি কাজী ওয়াসীমুল হক, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট এ প্র্যাক্টিস করছি। সেই সাথে আমি ওয়াসীমুল হক এন্ড অ্যাসোসিয়েটস্‌ এর প্রধান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *