লাইফষ্টাইল

অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন

তিতা হলেও সত্যিটা হলো, হয়তো এক সপ্তাহ আগেও আপনাকে যাদের ভালো লাগতো। আজকে তাদের কারো কারো আপনাকে ভালো লাগছে না। মানুষের পছন্দ খুব দ্রুত এবং ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। মানুষের মন খুব সহজে অনুপ্রানিত হয়। আপনার চারপাশে যদি দশজন ‘কাছের মানুষ’ থাকে। হয়তো তাদের মধ্যে ২-৩ জন দু’মুখ কিংবা দুই চেহারা সম্পন্ন ভন্ড ও থাকে। কেউ পিছনে আপনার দুর্নাম করবে। কেউ পিছনে আপনাকে ছুরি মারবে। হয়তো আপনি যাকে ফ্রেন্ড ভাবেন, সে আপনাকে ফ্রেন্ড ভাবে না। হতেই পারে এমন, হচ্ছেও হয়তো।

আজকে যে আপনাকে জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসছে। সে কালকে আপনাকে ভালোবাসবে কিনা – সেই নিশ্চয়তা আমি, আপনি কেউই দিতে পারবো না। আজকে যে বা যারা আপনাকে রেসপেক্ট দেখাচ্ছে। কয়েক মাস পর সেই তারাই হয়তো আপনাকে গালি দিবে। পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি ১৮০ ডিগ্রি কোণে ঘুরে যায়। সুন্দর সুন্দর কথা লিখে হাজার প্রশংসা করে আপনাকে যে মানুষটা মেসেজ দিয়েছিলো, সেই মানুষটাকেই হয়তো আপনি নিজ চোখে দেখেছেন আপনার দুর্নাম করতে।

আমি জানি, এই ব্যাপারটায় আপনার খারাপ লাগা উচিত। হয়ত খারাপ লেগেছেও। কিন্তু আপনি একটু খেয়াল করলে দেখবেন, আসলে একটা মানুষের ভালোলাগা কিংবা খারাপ লাগার ব্যাপারটা পুরাই স্বাধীন, পুরাটাই তার ইচ্ছা। আপনি আরো খেয়াল করলে দেখবেন, প্রতিদিন দুই/এক জন পুরনো মানুষ আপনার লাইফ থেকে চলে যাচ্ছে। হয়তো প্রতিদিন তিন জন মানুষের খারাপ লাগার লিস্টে আপনার নাম লেখা হচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি আপনার জীবনে দশজন নতুন মানুষ আসছে। যাদের ভালোলাগার লিস্টে আপনি আছেন। সব যোগ বিয়োগ করে প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী।

জীবনের মোড় ঘোরা, মানুষের রং বদলানো, পজিটিভ থেকে নেগেটিভ হওয়া – এই ব্যাপারগুলাকে আমাদের সহজভাবে নিতে শিখতে হবে। প্রথমেই চট করে পারবেন না সহজভাবে নিতে কিন্তু ধিরে ধিরে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। যে মানুষটার সাথে দেখা হলে আগে মুচকি হাসি দিয়ে কথা বলতো, সে এখন চোখে চোখ পড়লে চোখ সরিয়ে নেয় – এই ব্যাপারটায় আসলে আপনার কষ্ট পাওয়ার কিছু নাই। এই ব্যাপারটাকে পাত্তা দেওয়ারও কিছু নাই। একজন কাছের মানুষ ছিলো, এখন আর সে কাছের মানুষ নাই। সিম্পল। ইউ নিড টু জাষ্ট মুভ অন! আপনার জীবনে সেই মানুষগুলাই থাকবে, যারা আপনাকে বুঝে। আর যারা চলে যায়, তারা আপনাকে বুঝতে ব্যর্থ। বুঝতে ব্যর্থ হওয়া মানুষদের নিয়ে শোক করে থেমে থাকার চেয়ে বুঝতে পারা মানুষদের নিয়ে পথ চলাটাই হলো সার্থকতা। সেই সকল নেগেটিভ মানুষদের এড়িয়ে কি করে পজিটিভ মানুষদের নিয়ে এগিয়ে যাবেন তারই কিছু অব্যার্থ ফর্মুলা নিয়ে আজকে হাজির হয়েছি অবিনাশে।  

১) এটা মাথায় রাখুন যে, মহৎ প্রেম এবং মহৎ অর্জনের জন্য আপনাকে বড় ঝুঁকিও নিতে হবে।

২) আপনি কখনো হেরে গেলেও তা থেকে যা শিখলেন তা কখনো হারাবেন না।

৩) সবসময় নিজেকে শ্রদ্ধা করবেন। অন্যদের শ্রদ্ধা করবেন, আপনি যে কাজ করবেন তার জন্য আপনার যা দায়-দায়িত্ব তাকে শ্রদ্ধা করবেন।

৪) আপনি যা চান তা যদি না পান তবে ভেবে নিন ভাগ্য আপনার সহায় ছিলনা।

৫) কোনো নিয়ম যদি ভাঙতে চান তবে সে নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন আগে।

৬) আপনার মহৎ বন্ধুত্বকে ছোটো একটা তর্কের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ করবেন না।


লাইফ হ্যাকিং আরো বেশ কিছু টিপস্‌ –


৭) আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনি কোনো ভুল করেছেন তবে তা শোধরানোর জন্য সাথে সাথে চেষ্টা করুন।

৮) প্রতিদিন একা একা কিছু সময় কাটান।

৯) কোনো কিছু পরিবর্তনের জন্য অস্ত্র ব্যবহার করুন, কিন্তু তাতে যেন আপনার মূল্যবোধকে বিসর্জন দিতে না হয়।

১০) মনে রাখবেন নীরবতাই অনেক সময় সঠিক উত্তর হয়ে থাকে।

১১) একটা ভালো, সম্মানজনক জীবন যাপন করুন। তাহলে আপনি যখন বৃদ্ধ হবেন তখন পেছনের সময়গুলোর কথা ভাবলে আবারো দ্বিতীয়বারের মত তা উপভোগ করবেন।

১২) আপনার বাড়ীর একটা মনোরম পরিবেশ আপনার জীবনের ভীত গড়ে তোলে।

১৩) আপনার প্রিয় কারো সাথে কোনো বিষয়ে মতের অমিল হলে বর্তমানের বিষয় নিয়ে  থাকুন। কখনো অতীতকে টেনে আনবেন না।

১৪) আপনার জ্ঞান মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিন।

১৫) পৃথিবীর সাথে ভদ্র থাকুন।

১৬) বছরে একবার এমন কোনো জায়গায় যান যেখানে আপনি কখনো যাননি।

১৭) মনে রাখবেন, সেটাই হলো শ্রেষ্ট সম্পর্ক যেখানে দুজনের ভালোবাসা দুজনের প্রয়োজনকেও অতিক্রম করে যায়।

১৮) আপনার সাফল্যকে তা অর্জনের জন্য আপনাকে কি ত্যাগ করতে হয়েছে তা দিয়ে 
মূল্যায়ন করুন।

পরিশেষে এটুকুই বলবো, কোন মানুষের জন্য জীবন থেমে থাকে না। আপনার জন্য যে থেমে থাকে নাই, হেঁটে চলে গেছে, আপনি কেন তার জন্য থেমে থাকবেন? দিন শেষে, আপনাকে গন্তব্যে পৌছাতে হবে। সময়ের মধ্যেই পৌছাতে হবে। আপনার পাশে কেউ থাকুক, কিংবা নাই থাকুক। আপনাকে কেউ ভালো ভাবুক আর খারাপ ভাবুক। আপনাকে কেউ কেয়ার করুক আর নাই বা করুক। আপনাকে হাঁটতে হবে। অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। আপনার হাঁটা অন্য কেউ হেঁটে দিবে না। পৃথিবীটা এরকমই, একলা চলো কিংবা দোকলা চলো, কিন্তু দিন শেষে এগিয়ে চলো। চলতেই হবে, থামা যাবে না। কারো জন্য না, কখনোই না।

০৪/০৬/২০২২, ১০.০০ AM

Shamim Rony

পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। খুব কাঠখোট্টা বিষয় নিয়ে বসবাস। চেষ্টা করি সমস্যার গভীরে যেয়ে ডুবুরীর মুক্তা আরোহনের মতোই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে আনতে। জানার আগ্রহ প্রবল। এখনো নিজেকে এই বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের ছাত্র বলেই মনে করি। টেকনোলজি ভালোবাসি, সেই সাথে ভ্রমন পিপাসুও বটে। টেক দুনিয়ার হাল-চাল, বিদেশী অনুবাদ ও বিদেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতার রসদ সম্বল করেই কলম ধরেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *