অনাবৃত
সাধারণত প্রেমের প্রথম ধাপে ছেলেরা ‘দেখে’ এবং মেয়েরা ‘শুনে’ প্রেমে পড়ে। অর্থাৎ তারা ‘দেখে-শুনে’ প্রেম করে। চেনা নেই জানা নেই একটা মানুষকে দেখা মাত্র ক্রাশ খাওয়ার ব্যাপারগুলো ছেলেদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়। এরপর কিছু সিস্টেমের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। ক্রাশ খাওয়ার ব্যাপারটি মেয়েটিকে সহজ ভাবে বললে কাজ হবে না। সুন্দর করে গুছিয়ে বলতে হবে যে সে কতটা অসাধারণ, আর দশটা ছেলেদের মত না টাইপ সস্তা কথা বলে মেয়েকে বুঝিয়ে দিতে হবে সে এলেবেলে কেউ না। প্রথম দিকে ছেলেদের অতিরিক্ত বাড়িয়ে বলার ব্যাপারটি এখান থেকেই আসে। এই পর্যায় এসে তার কথা শুনেই মেয়েটি হয় প্রেমে পড়বে অথবা না।
এই ফর্মুলা সবার ক্ষেত্রে কাজ করবে এমনটি মনে করার কোন কারণ নেই। আমার মনে হয় প্রায় ৭০ ভাগ মানুষের প্রেমে পড়ার প্রথম ধাপে এই ব্যাপারটি মুখ্য থাকে। দ্বিতীয় ধাপে এসে ‘ সৌন্দর্য’ ব্যাপারটি আর মুখ্য থাকে না। কোন সৌন্দর্যই আপনাকে বেশি সময় আগলে রাখবে না। কক্সবাজারে টমটম চালায় এরকম একজনকে আমি একবার জিজ্ঞাসা করেছি; আপনি শেষ কবে সমুদ্রে নেমে গোসল করেছেন? তার জবাব ছিল; প্রায় দু বছর আগে। সমুদ্রকে খুব কাছ থেকে দেখার অপরাধে সমুদ্র এখন আর তাকে টানে না। এই সময়টিকে বলা হয় ‘ ক্লাউড নাইন’ এই সময় তাকে ‘জয়’ করার ব্যাপারটি চলে আসে। মনোয়ামাইন ‘ নামে কিছু স্নায়ুকোষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে, যার ফলে বাতি বন্ধ করে রোজ রাতে অঞ্জনের গান শুনতে হয়। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যে কোন টপিকেই কথা বলতে গেলে ঘুরে ফিরে ঐ মানুষটির প্রসঙ্গে চলে আসে।
দ্বিতীয় ধাপ নয়, আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা তৃতীয় ধাপের সময়টিকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই সময় একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষ বুঝতে শুরু করে। রেস্তোরাঁর অনেক স্মৃতি জমা হতে থাকে। সারাক্ষণ মুগ্ধ করার মত ছেলেমানুষিকতা আর কাজ করে না। একজন অন্যজনকে কেয়ার করা, খোঁজ খবর রাখা, সাপোর্ট দেয়া, শেয়ারিং সব মূলত এই সময়ে বেড়ে যায়। মজার ব্যাপার হল উপরের তিনটি স্তরের কোনটিকেই সত্যিকার অর্থে ভালবাসা বলা যায় না। কেননা এর কোনটিই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে না। কেননা কারো প্রতি যখন আপনার আবেগ বেড়ে যাবে তখন মস্তিস্কের বেশ কিছু রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া বেড়ে যাবে।
লাইফ হ্যাকিং আরো বেশ কিছু টিপস্ –
- মধ্যবয়স সংকট
- হতাশা থেকে মুক্তির উপায়
- অবিবাহের বিবাহিত ভ্রাতা সমাচার
- ধনী হতে চাইলে এই ৭ কাজ থেকে দূরে থাকুন
- রান্নাঘরে দুর্গন্ধ তাড়াতে এই ৭ টিপস মেনে চলুন
তাকে হাতের মুঠোয় পাবার পর ‘পী পদার্থ’ কমতে শুরু করবে। আবেগ কমে যাবে। এ জন্যই সম্পর্কের শুরুর দিকের একটিভিটি দু- তিন বছর পর আর থাকে না। এই সময়টাকেই মনে করা হয় সত্যিকারের ভালবাসা। যদিও বেশিরভাগ মানুষ এই স্টেইজে আসার আগেই ঝরে পড়ে। যারা টিকে যায় তারাই ভাগ্যবান। আমার জীবনের দেখা সব থেকে রোমান্টিক দৃশ্যে কখনোই একুশ বছরের তরুন তরুণীর নৌকা ভ্রমন থাকে না। আমি জানি এই নৌকা ডুবতে শুরু করলেই তারা ফ্যান্টাসি বাদ দিয়ে একজন অন্যজনকে ফেলে বাঁচার জন্য চিৎকার শুরু করবে।
শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক কাপল দেখতে চাও?
তাহলে বৃদ্ধদের কাছে যাও। প্রচণ্ড খারাপ সময়ের ভেতরেও একজন অন্যজনকে আগলে রেখেছে। রাত তিনটায় সামান্য বুকে ব্যথা হলে অন্যজন অস্থির হয়ে ডাক্তারকে ফোন দিবে। ডাক্তারের সান্ত্বনা মূলক কথাতেও তাদের মন শান্ত হয় না। জেগে থাকে সারারাত। এটাই ভালবাসা।
শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক দৃশ্য দেখতে চাও?
মৃত স্বামীর ছবির ফ্রেম দেয়ালে ঝুলিয়ে যে স্ত্রী তার সন্তানদের মানুষ করছে, ভেঙ্গে মচকে যাবার পরেও নীতির কাছে হার না মানার এক জেদ কাজ করে। মানুষটির উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি মুখ্য বিষয় না। মুখ্য হল প্রতিশ্রুতি। সামান্য ‘ সুন্দর’ কিংবা তার থেকে ব্রাইট ফিউচার অন্য কাউকে পেয়ে কোটি কোটি মানুষ প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যায়। অথচ কেউ কেউ ঠিকই আছে। যারা রোড এক্সিডেন্টে দুটি পা হারিয়ে ফেলার পরেও আগলে রাখে কাছের মানুষটিকে। ইয়েস, এটাই প্রতিশ্রুতি।
১৪/০৬/২০২২, ১০.০০ AM