ইসলামধর্ম

ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম জেনে নিন

গোসল আরবি শব্দ। অঞ্চলভেদে একে অনেকে গোসল করা বললেও কেউ স্নান করা, নাইতে যাওয়াও বলে থাকে। তবে আরবি গোসল শব্দের অর্থ হচ্ছে পুরো শরীর ধোয়া। আর ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দ্বারা পুরো শরীর ধোয়াকে ‘গোসল’ বলা হয়। একটু লজ্জায় সারাজীবনের ইবাদত বরবাদ হতে পারে। তাই আসুন জেনে নেই কিভাবে গোসল করবো।

রাসুল (সা.) যেভাবে গোসল করতেন

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মায়মুনা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তা দিয়ে তিনি জানাবাতের (অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার) গোসল করেন। আল্লাহর নবী (সা.) পাত্র হাতে নিয়ে নিজের ডান হাতের ওপর কাত করে তা দুই বা তিনবার ধৌত করেন। অতঃপর তিনি তাঁর লজ্জাস্থানের ওপর পানি ঢেলে— বাম হাত দিয়ে ধৌত করেন। পরে তিনি মাটির ওপর হাত ঘষে (দুর্গন্ধমুক্ত হওয়ার জন্য) তা পানি দিয়ে ধৌত করেন।

অতঃপর তিনি কুলি করেন এবং নাক পরিষ্কার করেন। অতঃপর মুখমন্ডল ও দুই হাত ধৌত করেন। এরপর তিনি নিজের মাথা ও সর্বাঙ্গে পানি ঢালেন। পরে তিনি সেই স্থান থেকে অল্প দূরে সরে গিয়ে উভয় পা ধৌত করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৫)

নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য নামাজের বাইরে যে রুকুনগুলো আছে তন্মধ্যে শরীর পাক, কাপড় পাক ও জায়গা পাক হওয়ার কথাও আছে। হাদীসে আছে যে অপবিত্র শরীরে, কাপড়ে ও বিছানাপত্রে নামায হয় না। [মিশকাত : ২৬২]

যে সব কারণে গোসল ফরজ হয় –

১. স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে।

২. স্বপ্নের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক শরীরে, কাপড়ে বা বিছানায় বীর্যের চিহ্ন দেখতে পেলে।

৩. নারী-পুরুষ মিলনে সহবাসে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক।

৪. মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব (হায়িয) বন্ধ হলে।

৫. নিফাস (সন্তান প্রসবের পর যে রক্ত স্রাব হয় তা) শেষ হলে।

৬. ইসলাম গ্রহণ করলে (নব-মুসলিম হলে)।

৭. স্ত্রী-পুরুষ কারও উত্তেজনার সাথে বীর্য বের হলে ফরজ গোসল ছাড়া নামাজ হবে না।

গোসলের ফরজ তিনটি –

১. একবার কুলি করা ফরজ।

১. একবার নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিস্কার করা ফরজ।

৩. সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো ফরজ।

গোসলের সুন্নত –

১. তিনবার কুলি করা সুন্নত।

২. তিনবার নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিস্কার করা সুন্নাত।

৩. সমস্ত শরীরে তিনবার পানি ঢেলে ভালো করে ঘষে পরিস্কার করা সুন্নাত।

গোসলের আরও সুন্নাত –

১. গোসলের নিয়ত করা।

২. গোসলের শুরুতে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।

৩. পেশাব পায়খানার রাস্তা পরিস্কার করা।

৪. শরীরের কোনো স্থানে নাপাকী থাকলে তা ধোয়া।

৫. অজু করা।

৬. পানি জমে থাকে এমন স্থানে গোসল করলে, গোসলের পর সেই স্থান থেকে সরে গিয়ে পা ধোয়া।

যার উপর গোসল ফরজ হয়েছে, সে যদি গোসলের একটা ফরজ বাদ দিয়ে শতবার গোসল করে, তবু তার শরীর নাপাক থেকে যাবে।


ইসলামের বিধি বিধান সম্পর্কে অন্যান্য লেখা –


ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম

গোসলের পদ্ধতি: গোসলের পূর্বে পেশাব করে নেওয়া উচিত। ফরজ গোসলের জন্য-

১. গোসলের জন্য মনে মনে নিয়ত করতে হবে।

২. প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করতে হবে।

৩. এরপর ডানহাতে পানি নিয়ে বামহাত দিয়ে লজ্জাস্থান এবং তার আশপাশ ভালো করে ধৌত করতে হবে। শরীরের অন্য কোন জায়গায় বীর্য বা নাপাকি লেগে থাকলে সেটাও ধৌত করতে হবে।

৪. এবার বাম হাতকে ভালো করে ধৌত করতে হবে।

৫. তারপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ওজুর নিয়মের মত করে ওজু করতে হবে অর্থাৎ “বিসমিল্লাহ” বলে ডান হাতে পানি নিয়ে উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া, তিনবার কুলি করা, তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়া, কপালের গোড়া হতে দুই কানের লতি ও থুঁতনির নীচ পর্যন্ত, প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত তিনবার ধোয়া (আংগুলে আংটি থাকলে, মেয়েদের হাতে, কানে, নাকে গহনা থাকলে তা নেড়ে-চেড়ে ভিজিয়ে নেয়া, সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা।

৬. অতঃপর প্রথমে মাথায় তিনবার (৩ অঞ্জলি) পানি ঢেলে চুলের গোড়ায় খিলাল করে ভালভাবে পানি পৌঁছাবে।

৭. এবার সমস্ত শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে ৩ বার ডানে তারপরে ৩ বার বামে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধৌত করতে হবে, যেন শরীরের কোন অংশই বা কোন লোমও শুকনো না থাকে। গোসল এমনভাবে করতে হবে, যাতে বগল, নাভী ও কানের ছিদ্র পর্যন্ত বাহিরের পানি দ্বারা ভিঁজে যায়। অতপর আবার সমস্ত শরীরে পানি ঢালবে।

৮. সবার শেষে একটু অন্য জায়গায় সরে গিয়ে দুই পা ৩ বার ভালোভাবে ধৌত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে

পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল ভালোভাবে ভিজঁতে হবে। গোসলের সময় মেয়েদের মাথার খোপা খোলার দরকার নেই। কেবল চুলের গোড়ায় তিনবার তিন চুল্লু পানি পৌঁছাতে হবে।

এই নিয়মে গোসলের পর নতুন করে আর ওজুর দরকার নাই, যদি ওজু না ভাঙ্গে। কেননা হযরত ‘আয়েশা রা. বলেন, নবী মুহাম্মদ সা. ফরজ গোসলের পর আর ওযূ করতেন না। [তিরমিযী : ১০৩, মিশকাত : ৪০৯]

রাসূল সা. এক মুদ্দ (৬২৫ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক পাঁচ মুদ্দ (৩১২৫ গ্রাম) বা প্রায় সোয়া তিন কেজি পানি দিয়ে গোসল করতেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপচয় করা ঠিক নয়। নারী হউক পুরুষ হউক সকলকে রাসূলুল্লাহ সা. পর্দার মধ্যে গোসল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

ফরজ গোসলে অবহেলার শাস্তি

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা আমি আমার এক প্রতিবেশীর জানাজায় যোগদান করি। তার লাশ কবরে নামানোর সময় বিড়ালের ন্যায় একটি অদ্ভুত জানোয়ার কবরের ভিতরে বাইরে লম্বঝম্প করে লাশ কবরে নামাতে বাধার সৃষ্টি করতে লাগলো। সেটিকে তাড়াবার জন্য সকলে মিলে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোনো প্রকারই দূর করা গেল না। ব্যর্থ হয়ে অন্যত্র গিয়ে কবর খনন করা হল। সেখানে গিয়ে জন্তুটি ভয়ানক উৎপাত করতে লাগলো। সেটিকে মারতে গিয়েও সর্ব প্রকার চেষ্টা ব্যর্থ হলো।

অগত্যা বাধ্য হয়ে অন্যত্র গিয়ে তৃতীয় কবর খনন করা হল। সেখানে গিয়েও জন্তুটি আরও বেশি উপদ্রব শুরু করলো। অনন্যোপায় হয়ে আমরা তাড়াতাড়ি তৃতীয় কবরেই তাকে দাফন করতঃ সভয়ে দ্রুতপদে সেখানে হতে প্রস্থান করলাম। দাফনান্তে কবর হতে বজ্রবৎ ভীষণ এক আওয়াজ বের হয়েছিল। আমি জানার জন্য তার স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তার স্ত্রী উত্তর দিলো, সহবাসের পর তিনি ফরজ গোসলে অবহেলা করতেন। এতে তার ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যেতো। এছাড়া তার অন্য কোনো পাপ আমি কখনো দেখি নাই।

০১/০৫/২০২২, ০৯.৩০ AM

N-Desk

ন্যাশনাল ডেস্ক যা কোথাও কোথাও N-Desk নামেও পরিচিত। এই ডেস্ক থেকে অবিনশ ব্লগে বাংলাদেশের চলমান ঘটনা তুলে এনে পেশ করা হয়ে থাকে। আপনিও চাইলে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে আমাদের লিখে পাঠাতে পারেন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া যে কোন তথ্য কিংবা ঘটনা সম্পর্কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *